অ্যাকালেশিয়া কার্ডিয়া, এটা একটা বিরল রোগ যাতে তরল ও কঠিন উভয় প্রকার খাবার গিলতে সমস্যা দেখা দেয় এবং গলাধঃকরণকৃত খাবার খাদ্যনালী হতে পাকস্থলীতে যেতে বাধাপ্রাপ্ত হয়।
এই রোগের কারণঃ
খাদ্যনালীর স্নায়ু বৈকল্যের কারণে এমনটি দেখা দেয় ফলে খাদ্যনালী বিকল হয়ে যায়, প্রসারিত হয়, এর সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা নষ্ট হয় এবং একই সাথে LOS (খাদ্য নালীর নিচের অংশের গেইটওয়ে) সংকুচিত হয়ে খাবার পাকস্থলিতে পৌঁছে দিতে পারে না।
এতে খাবার খাদ্যনালীতে জমা হতে থাকে, কখনও উগরে উঠে মুখে চলে আসে এবং মুখে তেতো অনুভূত হয়।
কেউ কেউ এটাকে GERD ভেবে ভুল করেন।
অ্যাকালেশিয়াতে গলাধঃকরণকৃত খাবার উগরে আসে খাদ্যনালী থেকে, অথচ GERD তে এটা আসে পাকস্থলী হতে।
অ্যাকালেশিয়ার সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য কোন চিকিৎসা নেই। একবার খাদ্যনালী বিকল হয়ে গেলে, সেই মাংসপেশী আর যথাযথ ভাবে কাজ করতে পারে না। তবে লক্ষ্মণ উপসর্গগুলো সাধারণত ওষুধের সাহায্যে, এন্ডোসকপিক ইন্টারভেনশন করে এবং সার্জারির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
অ্যাকালেশিয়ার লক্ষ্মণ উপসর্গসমূহঃ
এই রোগের লক্ষ্মণ উপসর্গসমূহ ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে এবং সময়ের সাথে সাথে স্থায়ী বৈকল্য দেখা দেয় —
১) খাবার গিলতে অপারগতা যেন মনে হয় খাবার অথবা পানীয় গলায় আটকে আছে ;
২) খাবার অথবা লালা উগরে ওঠা;
৩) বুক জ্বালা পোড়া করা;
৪) ঢেকুর আসা ;
৫) বুকে ব্যথা যা কেবল আসে আর যায় ;
৬) রাতের বেলা শুকনো কাশি ;
৭) নিউমোনিয়া (খাবার উগরে উঠে ফুসফুসে যেয়ে ইনফেকশন তৈরি করা)
৮) ঘন ঘন বমি হওয়া;
৯) দেহের ওজন কমে যাওয়া।
অ্যাকালেশিয়া রোগের কারণঃ
সঠিক কারণ আজও সুচারুরূপে নির্ণয় করা যায়নি।
গবেষকবৃন্দের ধারণা হলো খাদ্যনালীর স্নায়ু বৈকল্যই মূল কারণ। কেউ কেউ ভাইরাসের সংক্রমণ এবং অটোইমিউনিটিকে এক্ষেত্রে দায়ী করেছেন। আবার কেউ এটাকে বংশানুক্রমিক জন্মগত ত্রুটি কিংবা অন্য কোন অজানা ভাইরাসের সংক্রমণকেও দায়ী করেছেন।
অ্যাকালেশিয়া রোগ নির্ণয়ঃ
এই রোগটি অনেক সময় সাধারণ পরীক্ষায় ধরা পড়ে না কিংবা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয় কেননা এর লক্ষ্মণ উপসর্গগুলো অন্য কিছু রোগের সাথে মিলে যায়।
নিম্নোক্ত পরীক্ষা নিরীক্ষা করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়—
১) ইসোফেজিয়াল ম্যানোমেট্রিঃ
এই পরীক্ষার মাধ্যমে খাবার গলা থেকে পাকস্থলীতে যেতে খাদ্যনালীর মাংস পেশীর ছন্দময় সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রয়েছে কি না সেটা বুঝা যায় ;
২) ব্যারিয়াম-সোয়ালো এক্স-রেঃ
রোগীকে চকের মতো সাদা পানীয় খাওয়ানোর পরে খাদ্যনালীর সংকোচন প্রসারণ এবং খাদ্যনালীর নিচের অংশের LOS বা গেইটওয়ের খোলা কিংবা সংকুচিত অবস্থা দেখা হয়।
৩) এন্ডোসকপিঃ
এই পরীক্ষার মাধ্যমে খাদ্যনালীর প্রসারিত হয়ে যাওয়া, খাদ্যনালীতে জমা হয়ে থাকা খাবার ও নিচের অংশের LOS বা গেইটওয়ের টাইট হয়ে লেগে থাকা বুঝা যায়।
অ্যাকালেশিয়ার চিকিৎসাঃ
এই চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হলো খাদ্যনালীর নিচের অংশের সংকুচিত হওয়া LOS বা গেইটওয়েটি প্রসারিত করে দেওয়া যাতে সহজেই বাঁধাহীনভাবে খাবার ও পানীয় খাদ্যনালী হতে পাকস্থলীতে চলে যেতে পারে।
যথোপযুক্ত চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর বয়স, দৈহিক স্বাস্থ্যের অবস্থা ও এই রোগের তীব্রতার ওপর।
১) ওষুধের মাধ্যমে চিকিৎসাঃ
ক্যালশিয়াম চ্যানেল ব্লকার কিংবা
নাইট্রোগ্লিসারিন জাতীয় ওষুধ ;
২) এন্ডোসকপির মাধ্যমে চিকিৎসাঃ
এন্ডোসকপি করে বটুলিনাম টক্সিন প্রয়োগ করা;
এন্ডোসকপি করে বেলুন ফুলিয়ে সংকুচিত হয়ে যাওয়া LOS প্রসারিত করে দেওয়া;
POEM (Peroral Endoscpic Myotomy) এন্ডোসকপির মাধ্যমে একটি ছোট সার্জারি করে LOS প্রসারিত করে দেওয়া ;
৩) সার্জিক্যাল চিকিৎসাঃ
ল্যাপারোস্কপিক সার্জারির মাধ্যমে Heller Myotomy করে কিংবা
Fundoplication করে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
সর্বোপরি লাইফ স্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমে —
সময় নিয়ে, ধীরে ধীরে, ভালো ভাবে চিবিয়ে খাবার গলাধঃকরণ করার অভ্যাস তৈরি করা ;
খাবারের সাথে প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা;
খাবার গ্রহণের অন্তত ৩ ঘন্টা পরে বিছানায় যাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা;
বিছানার মাথার দিকের অংশটি উঁচু করে রাখতে হবে অথবা একটি বালিশের জায়গায় দুইটি বালিশ ব্যবহার করতে হবে।
বেলুন ডাইলেটেশন কিংবা অপারেশনের পরে পাকস্থলী হতে এসিড রিফ্লাক্স রোধ করতে নিম্নোক্ত খাবার বর্জন করতে হবে —
টক জতীয় ফল, টমেটো কেচাপ, চকোলেট, অ্যালকোহল, কফি ইত্যাদি ;
সাথে PPI জাতীয় ওষুধ গ্রহণ করতে পারলে কাঙ্খিত ফলাফল পাওয়া যায়।
ডাঃ এম সাঈদুল হক
সহকারী অধ্যাপক, লিভার বিভাগ,
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬