গিলবার্ট’স সিন্ড্রোম হলো অক্ষতিকর, পারিবারিক, মৃদু জন্ডিস যেখানে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা ১-৫ মি.গ্রা./ডি.এল এর বেশি নয় এবং সাথে লিভারের কার্যক্ষমতা ও গঠন অক্ষুন্ন থাকবে।
মোট জনসংখ্যার ২-৫ শতাংশ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
এই রোগটি সাধারণত হঠাৎ করেই ধরা পড়ে রুটিন মেডিক্যাল চেকআপের সময় কিংবা অন্য কোন কারণে রক্ত পরীক্ষার সময়।এই রোগের ভবিষ্যত অত্যন্ত ভালো কেননা এতে লিভারের ক্ষতি কিংবা জীবনহানির কোন শংকা নেই।
এতে জন্ডিস সাধারণত মৃদু এবং আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে (যেমন — দীর্ঘ সময় ধরে অভুক্ত অবস্থায় থাকলে, অত্যধিক কায়িক শ্রমের জন্য, জ্বর অথবা কোন ইনফেকশনের কারণে), সেই সাথে শারীরিক দুর্বলতা, বমিবমি ভাব এবং প্রায়ই পেটের উপরিভাগে ডান দিকে অস্বস্তিকর অনুভূতি হতে পারে। এছাড়া শরীরে আর কোন অস্বাভাবিকতা দেখা যায় না।
এই রোগে রক্তে বিলিরুবিন বেড়ে যাওয়ার কারণ হলো–
১) লিভারে গ্লুকোরনাইডেশনের ঘাটতি
২) গ্লুকোরনাইল ট্রান্সফারেজ এনজাইমের ঘাটতি
৩) লিভারের বিলিরুবিন সংগ্রহণে ঘাটতি কিংবা
৪) গুপ্ত অবস্থায় রক্তের লোহিত কণিকার ভেঙ্গে যাওয়া
‘ক্যালরি ডেপ্রাইভেশন টেস্ট’ নামে একটি বিশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে এই রোগটি সুন্দরভাবে নির্ণয় করা যায় —
এতে অভুক্ত অবস্থায় রক্তে ইন্ডাইরেক্ট বিলিরুবিনের মাত্রা অনেকাংশে (> ১১০%) বেড়ে যায় আবার ভুক্ত অবস্থায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশিই (> ৬০%) থাকে। রক্তে লিভারের অন্যান্য এনজাইমগুলো স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে যেমন SGPT, SGOT, Alkaline phosphatase। লিভারের গঠন অর্থাৎ Histology স্বাভাবিক থাকে।
রোগীর দেহে জন্ডিস ছাড়া অন্য কোন প্রকার লক্ষ্মণ উপসর্গ থাকে না। প্রস্রাবের রং স্বাভাবিকই থাকে (তবে কিছুক্ষণ রেখে দিলে পরে হলুদ বর্ণ ধারণ করে) কেননা এক্ষেত্রে প্রস্রাবে বিলিরুবিন আসে না।
গিলবার্ট’স রোগীরা স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারেন এবং স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল লাভ করেন।
চিকিৎসা বলতে রোগীকে রোগটি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দেওয়া এবং একই সাথে তাকে আশ্বস্ত করাই হলো মূল লক্ষ্য। অন্য কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই।
গিলবার্ট’স সিন্ড্রোমের জন্ডিস হলো সারা জীবনের জন্ডিস এবং এটা কোন রোগের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, শুধুমাত্র অভুক্ত অবস্থায় বেড়ে যায়। রোগীকে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয় যে কোন ইনফেকশন, ঘন ঘন বমি এবং কোন বেলায় খাবার খেতে ভুলে গেলে জন্ডিস বেড়ে যেতে পারে।
গিলবার্ট’স সিন্ড্রোমের পরিণতি খুবই ভালো; এতে কোন চিকিৎসা লাগে না তবে যথাযথ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ কেননা লিভারের কিছু জটিল রোগে এই রোগটি ভুলভাবে উপস্থাপিত হতে পারে।
গিলবার্ট’স সিনড্রোম রোগীর জন্য উপদেশঃ
১) কোন চিকিৎসার প্রয়োজন নেই ; স্বাভাবিক জীবন যাপন করবেন, অধিক শারীরিক পরিশ্রম, দীর্ঘ সময় রোদে থাকা, দীর্ঘ সময় ধরে অভুক্ত থাকা এড়িয়ে চলতে হবে, জ্বর কিংবা সার্জারিতে সতর্ক থাকবেন।
২) রোগীকে এই রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া,
৩) রোগীকে আশ্বস্ত করা,
৪) এই রোগে রোগীর স্বাভাবিক আয়ুষ্কাল অক্ষুণ্ণ থাকে,
৫) সকল প্রকার স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন,
৬) অন্য দশজন সাধারণ মানুষের ন্যায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারবেন,
৭) বিয়ে শাদী, সন্তান জন্মদানে কিংবা গর্ভধারণে কোন সমস্যা নেই,
৮) এটা ছোঁয়াচে রোগ নয়,
৯) কোন বিশেষ ওষুধ খেতে হবে না,
১০) এই রোগ হতে মারাত্মক কিছু কিংবা লিভার ক্যান্সার হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।
ডাঃ এম সাঈদুল হক সহকারী অধ্যাপক,
লিভার বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।
চীফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা গ্যাস্ট্রো-লিভার সেন্টার।
০১৭০৩-৭২৮৬০১, ০১৭১০-০৩২১৫৮
০১৯২৭-০৬৮১৩৬, ০১৮৬৫-৫০৪০২৬